মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন

Notice :
সারা বাংলাদেশ ব্যাপী বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে..........চট্টগ্রাম অফিস: সৈয়দ নূর বিল্ডিং , এম এ আজিজ রোড, সিমেন্ট ক্রসিং, দক্ষিণ হালিশহর, চট্টগ্রাম।মোবাইল নাম্বারঃ ০১৯১১৫৩৩৩০৮, ০১৭১১৪৬৭৫৩৭, E-mail: gsmripon@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আলহাজ্ব শফিউল আলমের তিন স্থানে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত অভয়নগরে বিএনপির উদ্বোগে মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন-খোরশেদুল আলম। সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৭তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত।  আকমল আলি রোডে মাদকবিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অভয়নগরে বিএনপির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত নওয়াপাড়ায় নবনির্বাচিত মটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে ট্রাক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান। নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের পি-টেস্ট পরিক্ষার ফলাফল ঘোষণা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।  পতেঙ্গায় জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী ইউসুফ’র টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ

সোয়াত জাহাজ ঘেরাও আন্দোলন: স্বাধীনতা দিবসের সূচনাতে হালিশহর পতেঙ্গা শ্রমিক জনতার অবদান স্বীকৃতি চাই

সোয়াত জাহাজ ঘেরাও আন্দোলন:
স্বাধীনতা দিবসের সূচনাতে হালিশহর পতেঙ্গা শ্রমিক জনতার অবদান স্বীকৃতি চাই

মুঃবাবুল হোসেন বাবলাঃ(২৪মার্চ,চট্টগ্রাম)

১৯৭১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টার দিকে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পাকিস্তানের এমভি সোয়াত নামে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের ৭নং জেটিতে নোঙর করে । সেই সোয়াত জাহাজে অস্ত্র আসার খবর মূহুর্তে ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের শ্রমিক-ছাত্র জনতা প্রথমে জেটি এলাকায় পরে সেই সংবাদ আরো স্বক্রিয় ভাবে একজন শ্রমিক অত্যন্ত গোপনে সিবিএ’র নেতা আবুল বাশার কে জানালে,শ্রমিক নেতা বাশার তৎকালীন পতেঙ্গা-হালিশহর শিল্পাঞ্চালনের(স্টীল মিল)’র প্রায় ৬/৭হাজার শ্রমিক,স্থানীয় জনতা নিয়ে তীব্র আন্দোলনে দাবানলের মতো জ্বলে উঠেন আর মুক্তিকামী বাঙালি সোয়াত জাহাজ কে ঘেরাও দিয়ে রাখে দিনভর।
সেই আন্দোলন থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের ডাক আসে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে আবারও পাক সেনাদের গুলির মুখে পড়েন প্রতিবাদী জনতা। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরুর আগেই ২৪শে মার্চ সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের সেই দিনটিই প্রকৃত ৯ মাস ব্যাপী বাঙালির জনযুদ্ধর সূচনা বলে সেই সময়কার প্রতিরোধকারী নেতাদের অন্যতম প্রয়াত আঃলীগ সেক্রেটারী শফিউল আলম এবং প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আমিন, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুছা,প্রয়াত ফিরোজ খান।


১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধের জন্য যে রক্তস্নাত আন্দোলন হয়ে ছিল সেটা জনযুদ্ধে আরো ব্যাপকতা দেয়। কারণ সেই আন্দোলনে শ্রমিক, ছাত্র, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাধারণ জনতা সবাই ছিলেন। আর চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৫ মার্চ রাতেই। সেদিন ক্যাপ্টেন রফিক হালিশহরে ইপিআরের ক্যাম্প দখল করে প্রায় ১৫০ জন অবাঙালি সৈন্য হত্যা করেন। সোয়াত জাহাজে অস্ত্র খালাসে অস্বীকৃতি জানালে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিকদের উপর চড়াও হয় পাকিস্তানি সেনারা। বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে প্রায় ১৫০ শ্রমিককে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে খুন করা হয়। এই ঘটনার পর শ্রমিকরাও সেই সময় চলা উত্তাল অসহযোগ আন্দোলনে পূর্নমাত্রায় যোগ দেয়। যে কোন জনযুদ্ধের জন্য এই ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে একটা বড় ঘটনা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে সত্যিকারের জনযুদ্ধ ছিল এটাই তার অন্যতম বড় প্রমাণ।
বন্দরের এক ক্ষুব্ধ ডক শ্রমিক সোয়াত জাহাজ থেকে ২৪শে মার্চ অস্ত্র খালাস হবে বলে এমন তথ্য পৌঁছে দেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নানের কাছে। তিনি বিষয়টি ঢাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের জানালে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আসে, কোনভাবেই সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে দেয়া যাবে না এবং জাহাজের পাকিস্তানী সৈন্যদেরও নামতে দেয়া যাবে না। চট্টগ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরী, মজিদ মিয়া, ইসহাক মিয়া, আতাউর রহমান খান কায়সার, আবদুল্লাহ আল হারুন, আবু সালেহ, এস এম জামালউদ্দিন, মোহাম্মদ হারিছ মিয়া সভা-সমাবেশে সোয়াত জাহাজে করে অস্ত্র আনার বিষয়টি তুলে ধরে জনতাকে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
২৪শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে, বিকেল ৪টায় সোয়াত জাহাজ অবরোধের ডাক দিয়ে বন্দরের নিউমুরিং কলোনির মাঠে(চাঁন খালীর মাঠ) সমাবেশ ডাকাহয়।সেদিন সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধের সমাবেশ আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা শামসুদ্দিন, তরুণ ছাত্র আব্দুস সাত্তার ও তারেক,শ্রমিক নেতা মোঃ আবু তাহের(পরে ৩৯নং ওয়ার্ড আঃলীগ যুগ্ন সম্পাদক-১)। সেই সমাবেশে শুধু ছাত্র-তরুণই নয়, বন্দরের শ্রমিক এবং নিউমুরিং কলোনিসহ আশপাশের এলাকার সাধারণ বাসিন্দারাও যোগ দেন।
সন্ধ্যার দিকে সমাবেশস্থলে খবর আসে অস্ত্র খালাসের জন্য সোয়াত জাহাজ জেটিতে ভিড়েছে। সমাবেশ থেকে ৪-৫ হাজার মানুষ স্টিলের রড নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের তিন নম্বর জেটি অভিমুখে মিছিল শুরু করে। চকবাজারের প্যারেড গ্রাউন্ডে সেদিন মঞ্চস্থ হচ্ছিল নাটক ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাদের কাছে খবর পৌঁছার পর জনতা নাটক দেখা বন্ধ করে বন্দরের দিকে রওনা দেয়। বন্দর থেকে ডক শ্রমিকরাও বেরিয়ে আসে।
আর সেই সময়ে বন্দর হালিশহর-পতেঙ্গা শিল্পা অঞ্চলের হাজার হাজার জনতার মধ্যে যাঁদের নাম পাওয়া যাই তারা হলেন ইসহাক মিয়া,মজিদ মিয়া,শফিউল আলম(আঃলীগ সেক্রেটারী),মোজাহের(কালামিয়া),জানে আলম বাহার,কামাল কমিশনার, আঃ মুমিন ,মোঃ আলী,এডঃ জানে আলম,মোঃ ফছিউল আলম,মোঃ ইলিয়াছ, প্রয়াত সিরাজুল আমিন, আব্দুস সোবহান, আঃ মোতালেব,আব্দুল হাই,আবুল হাশেম (আটিস্ট),পরিক্ষিত দাশ,আঃলীগ নেতা হাজী হারুণ অর রশিদ,কাশিম মাস্টার, তোঁতা ও বতামিয়া,কামাল সাইলো, কামাল উদ্দিন(জি.এম),পাঠাগার সম্পাদক শামমুল আলম,আবুল কালাম,জালাল আহম্মদ,এম.এ কাশেম ,আবু জাফর ,জাফর আহম্মদ,ডাঃআইয়ূব আলী,ডাঃএম,আর শরীফ,মোঃইদ্রিস(ওয়াটার সেকশন),এনামুল হক মেম্বার,ফজলুল হক, মাইক এজার,আবু নাছের,আব্দুস সাত্তার,লিয়াকত আলী,সুলতান আহম্মদ, নুরুল হক,জয়নাল আবেদীন সহ অসংখ্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দ..। (সূত্র:দৈনিক আজাদী,১৯৯৪ইং)।
সোয়াদ জাহাজ ঘেরাও এর অনেকই আজো বলছেন সেই দিনের মরাস্ত্র প্রতিরোধ না হলে হয়তো আজকের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বাধীন রাষ্ট্র হতো কিনা সন্দেহ ছিল। সেই আন্দোলনটি প্রকৃত ঘঠে ছিল বর্তমানের রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টুরীর সংলগ্ন (সালাউদ্দিন) গেইট নামকে স্থানে। সেই দিন দুপুরেই শ্রমিকরা ইটের কংকর,মরিচরে ঘুড়া আর বাশেঁর লাটি ও রড দিয়ে প্রথমে প্রতিরোধ শুরু করে। পরে অবশ্যই শ্রমিক জনতা ইপিআর বাহিনীর মাধ্যমে তাদের ফেরত যেতে বাধ্য করেন। আর সেই জাহাজের ক্যাপটেন ছিলেন মেজর জিয়া।তিনি পরে আবারো অস্ত্র খালাসের চেষ্টা করলে তীব্র আন্দোলন আর প্রতিরোধের মুখে মেজর জিয়াও জাহাজ রেখে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে চলে যান।এই অপরাশনে জিয়া কে পরে দায়িত্বে দেন,এর আগে পাকিস্তানের অন্য একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তবে যাই ঘটুক দেশে সেই দিন এই শ্রমিক জনতাই বীরের বেশে পাকিস্তান সৈন্যদের প্রথম প্রতিরোধর ডাক দেন।
আজ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের ৫২বছর পূর্তিতে তাদের কে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ ও সম্মান জানাচ্ছি ।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2023 Channel69tv.net.bd
Design & Development BY ServerNeed.com